Enjoyed this blog? Join Us on Telegram

বিসিএস পরীক্ষায় চর্যাপদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন

চর্যাপদ

চর্যাপদ হলো বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন সাহিত্যের একমাত্র নিদর্শন। এটি হলো বৌদ্ধ সহজিয়াদের সাধন সংগীত। চর্যা শব্দের অর্থ আচরণ। চর্যাপদের মূল নাম চর্যাচর্যবিনশ্চয়।

চর্যাপদ
চর্যাপদের ইতিহাস এক ছবিতেই

বিশিষ্ট লেখক হুমায়ন আহমেদের মতে চর্যাপদের রচনাকাল ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দে। হরপ্রসাদ শাস্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রাজ্ দরবার থেকে এটি আবিষ্কার করেন। সেই সাথে তিনি "ডাকার্ণব", "কৃষ্ণপাদের দোহা" ও "সরহপাদের দোহা" নামে আরো তিনটি বই উদ্ধার করেন। এদের মধ্যে "কৃষ্ণপাদের দোহা" ও "সরহপাদের দোহা" বই দুইটি একত্রে "দোহাকোষ" নাম পরিচিত।
হরপ্রসাদ শাস্রীর সম্পূর্ণ নাম মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্রী। তিনি মূলত ১৮৮২ সালে প্রকাশিত রাজেন্দ্রলাল মিত্রের "Sanskrit Buddhist Literature in Nepal" গ্রন্থের সূত্র ধরে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন। 
পরবর্তীতে ১৯১৬ সালে বাংলা সাহিত্য পরিষদ থেকে "হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা" নামে চর্যাপদের পুঁথিগুলো প্রকাশ করা হয় যার সম্পাদনা করেছিলেন হরপ্রসাদ শাস্রী নিজেই।
অপরদিকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পাদিত চর্যাপদ বিষয়ক গ্রন্থের নাম "Buddhist Mystic Songs", যা রচিত হয় ১৯২৭ সালে। এই গ্রন্থটি মূলত চর্যাপদের অনুবাদ ও সম্পাদনা কর্ম। শহীদুল্লাহ এর এই বইটি রচনার অনুপ্রেরণায় রয়েছে মূলত ড. সুনীতিকুমার এর ১৯২৬ সালে রচিত "Origin and Development of Bengali Language" যা ODBL নামেও পরিচিত। এর বাংলা নাম হলো "বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ"।
বাংলা ভাষার সাথে চর্যাপদের অনস্বীকার্য যোগসূত্রের বৈজ্ঞানিক যুক্তি দেন ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, এবং এ বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, চর্যাপদ মূলত হাজার বছরের পুরোনো বাংলা ভাষা। আর হাজার বছরের পুরোনো বাংলা ভাষা বা চর্যাপদের ভাষাকে সান্ধ্যভাষা বা আলোআঁধারী ভাষা বলে। তবে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর মতে চর্যাপদের ভাষা হলো বঙ্গ-কামরূপী।
চর্যাপদের পদকর্তা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর মতে ২৩ জন এবং সুকুমার সেনের মতে ২৪ জন। অনুরূপভাবে পদসংখ্যা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর মতে ৫০ ও সুকুমার সেনের মতে ৫১। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কম সংখ্যাই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর মত। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে গৃহীত মত হচ্ছে ২৩ এবং ৫১ সংখ্যাদ্বয়। এছাড়াও সুকুমার সেনের মতে চর্যাপদের আদি কবি লুইপা কিন্তু শহীদুল্লাহ এর মতে প্রাচীন কবি সবরপা।
চর্যাপদের মোট ৫০ টি পদের মধ্যে সাড়ে ৪৬ টি পদ পাওয়া গেছে। বাকি পদগুলোর মধ্যে ২৩ নং পদটি খণ্ডিত আকারে বা ছয়টি পঙ্কক্তি পাওয়া গেলেও ২৪, ২৫, ৪৮ নং পদগুলো পাওয়া যায় নি। অর্থাৎ চর্যাপদের সাড়ে ৪৬ টি পদ পাওয়া গিয়েছে। তবে চর্যাপদের ১১ নং পদটি টীকাকার কতৃক ব্যখ্যা হয় নি। মানিদত্ত চর্যাপদের পদগুলোকে টিকার মাধ্যমে ব্যখ্যা করেন।
চর্যাপদের কবি বা পদকর্তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কবিগণ হচ্ছেন লুইপা, কাহ্নুপা, ভুসুকুপা, সবরপা, কুক্কুরীপা ও শান্তিপা। এদের মধ্যে কাহ্নুপা ১৩ টি, ভুসুকুপা ৮ টি, সবরপা ৪ টি, কুক্কুরীপা ৩ টি, লুইপা ২ টি , শান্তিপা ২ টি ও অবশিষ্টরা প্রত্যেকে ১ টি করে পদ রচনা করে। অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি পদ রচনা করেন কাহ্নুপা। কাহ্নুপা ধর্ম ও সঙ্গীত শাস্র উভয় দিকেই দক্ষ ছিলেন। লুইপার রচনাকৃত ২ টি পদের মধ্যে একটির নাম অভিসময়বিভজ্ঞা। চর্যাপদের আধুনিকতম পদকর্তা সবরপা বা ভুসুকুপা, তবে বাঙালি কবি সবরপা, নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিয়েছেন ভুসুকুপা। চর্যাপদের একমাত্র মহিলা কবি কুক্কুরীপা, যদিও তার আসল নাম জানা যায় নি, তার নাম কুক্কুরীপা হওয়ার কারণ হলো তিনি একটি কুকুর লালন-পালন করতেন। শান্তিপা বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করতে সিংহল গিয়েছিলেন। এছাড়া, চর্যাপদে লাড়ীডোমপিপা এর নাম থাকলে তার কোনো পদ পাওয়া যায় নি। 
চর্যাপদের পদগুলো রচিত মাত্রাবৃত্ত ছন্দে। চর্যাপদের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তবক রয়েছে। এই পঙ্কক্তি বা স্তবক গুলো পড়ার সময় আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে এ গুলো সান্ধ্য বা আলোআঁধারী ভাষায় রচিত। যেমন:
আপনা মাংসে হরিনা বৈরী
কমল মধু পিবিবি ধোকাইন ভোমরা

লুইপার চর্যাংশ-
চঞ্চল চিত্র পইঠা কাল


কাহ্নুপার চর্যাংশ-
আলি এ কালি এ রুদ্ধেলা
তা দেখি কাহ্নু বিমনা ভইলা

নিম্নোক্ত পঙ্কক্তি দ্বারা দারিদ্রক্লিষ্ট জীবনের চিত্র ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে-
টালত মোর ঘর নাহি পরবেশি
হারিত ভাত নাহি নিতি অবলী

কুক্কুরীপার চর্যাংশ- 
দিবসহি বহুড়ী কাউহি ভোর ভাই
রাতি ভইলে কামরু জাই

চর্যাপদে উল্লিখিত "করন" শব্দের অর্থ ইন্দ্রিয়চেতনা।

চর্যাপদ সম্পর্কিত উপরোক্ত প্রত্যেকটি শব্দই খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ভাষার ইতিহাস জানার জন্য বা যেকোনো চাকরির পরীক্ষার জন্য, বিশেষ করে বিসিএস পরীক্ষার জন্য এই লিখাটির গুরুত্ব অনসীকার্য। আশা করা যায় উপরোক্ত লিখাটি ভালো করে পড়লে চর্যাপদ সম্পর্কে আপনার মোটামোটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলো জানা হয়ে যাবে যা প্রকৃত পক্ষে যেকোনো চারকরীর পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট।

About the Author

Navigating opportunities in chemistry.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.